সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১st জানুয়ারি ২০২৩
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মোঃ মশিউর রহমান এনডিসি কর্তৃক বার্ড মডেল স্কুলের ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবসের’ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ
প্রকাশন তারিখ
: 2023-01-01
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব মোঃ মশিউর রহমান এনডিসি বলেছেন, বছরের প্রথম দিনেই ৩৪ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে পারা সরকারের বিশাল সক্ষমতার পরিচায়ক। আজ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), কুমিল্লায় আয়োজিত বার্ড মডেল স্কুলের ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবসের’ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের শৈশবে আমরা বছরের প্রথম দিনে হাতে নতুন বই পাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারিনি। আমরা নতুন ক্লাশে উঠে আমাদের আগের বছরের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়ে পুরাতন বই পড়তাম। ছোটবেলায় নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেওয়ার স্মৃতির কথা উল্লেখ করে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব বলেন, গতকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। এ উৎসবের মাধ্যমে সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। জনাব মোঃ মশিউর রহমান এনডিসি বলেন, সবার হাতে হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিতে পারা সরকারের একটা বিরাট সাফল্য। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরে বিনামূল্যে বই বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরের বছর ১ জানুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বই উৎসবের উদ্বোধন করেন। সে থেকে কোটি কোটি শিক্ষার্থী বছরের প্রথম দিন উৎসবমুখর পরিবেশে নতুন বই হাতে পাচ্ছে।
প্রধান অতিথি বলেন, আজকের প্রজন্ম মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে বই বিমুখ হয়ে পড়েছে। এসব ডিজিটাল মাধ্যমে থেকে অনেক কিছু শেখা গেলেও তিনি এসবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ক্ষতিকর দিকগুলো কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, বই পড়ার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বই মানুষের মনকে সমৃদ্ধ করে। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে সচিব বলেন, বই পড়ার উদ্দেশ্য কেবল জিপিএ-৫ পাওয়া নয়। বই বড়ার উদ্দেশ্য হবে জ্ঞানার্জন। জ্ঞান মানুষকে আলোকিত করে, জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সঠিক মূল্যবোধ সৃষ্টি হয়, মমত্ববোধ জাগে। সাম্প্রদায়িকতা এবং দর্মান্ধতা দূর করার জন্যও ভাল বই পড়া অপরিহার্য।
পড়াশোনা শেষে শিক্ষার্থীদের সরকারী চাকুরী খোঁজার প্রবণতাকে সমালোচনা করে তিনি বলেন, ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে সরকারী চাকুরীর পদ আছে সর্বসাকুল্যে ১৯ লাখ। কিন্তু এরপরও সবাই চায় একটা সরকারী চাকুরী। এর একটি কারণ হিসেবে তিত্নি বলেন, আমাদের অনেকেরই ধারণা কোনোক্রমে একটা সরকারী চাকুরী পেয়ে গেলেই হল। কিছু না করেই মাসে মাসে বেতন পাওয়া সম্ভব। এজন্যই একটা সরকারী চাকুরীর জন্য আমরা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হই। মোঃ মশিউর রহমান এনডিসি বলেন, পড়াশোনার উদ্দেশ্য কেবল চাকুরী পাওয়া নয়। পরাশোনা শেষে আমাদের সব কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। প্রতিটি পেশাই সমাজের জন্য অপরিহার্য বলে সচিব বলেন, উন্নত বিশ্বে আমাদের মত সবাই বিএ-এমএ পাশ করার জন্য ছোটে না। সেখানে বেশিরভাগ মানুষ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত পড়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করে। আর আমরা একবার বিএ-এমএ পাশ করে সাধারণ কোনো কাজ করতে চাই না। সবাই খুঁজি সরকারী চাকুরী। একে তিনি দেশের সম্পদের অপচয় বলে অভিহিত করেন।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উন্নত বিশ্বের অংশ হওয়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথি বলেন, পৃথিবী এখন চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে আমরা পিছিয়ে যাব এবং আমাদের যাত্রা ব্যহত হয়ে যাবে। কাজেই শিক্ষার্থীদের সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি সবাইকে আবারও বই পড়ার অভ্যাস গঠনের পরামর্শ দেন এবং খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হতে আহ্বান জানান।
বার্ডের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. আবদুল করিম এর সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবসের’ অনুষ্ঠানে বার্ড মডেল স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ছাড়াও বার্ডের কয়েকজন অনুষদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এসময় বার্ড মডেল স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্য হতে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা মিঠি প্রধান অতিথির কাছ থেকে নতুন বই গ্রহণের পর তার অনুভুতি ব্যক্ত করে।
পরে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব মোঃ মশিউর রহমান এনডিসি বার্ড ক্যাম্পাসে অবস্থিত পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সমবায় একডেমিতে বিসিএস সমবায় ক্যাডার এর দুই মাস মেয়াদী বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন করেন। এসময় সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক ড. তরুণ কান্তি শিকদার উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া তিনি একই দিন বার্ডে চলমান বিসিএস (শিক্ষা) এবং বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাথে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বিষয়ে একটি সেশন পরিচালনা করেন।