১. স্বাধীনতা পদক
পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মডেল/কর্মসূচী উদ্ভাবনের মাধ্যমে গৌরবময় অবদান ও কীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ বার্ড ১৯৮৬ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ লাভ করে।
২. জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদক-২০১৩
পল্লী উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য বার্ড জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদক-২০১৩ অর্জন করে।
৩. আজিজ-উল-হক রুরাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০২২
পল্লী উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে অসামান্য অবদানের জন্য “আজিজ-উল-হক রুরাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০২২” লাভ করেছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)। আন্তঃমহাদেশীয় আন্তর্জাতিক সংস্থা সিরডাপ ২০২১ সালে সংস্থাটির প্রথম প্রধান নির্বাহী জনাব আজিজ-উল-হকের সন্মানে “আজিজ-উল-হক রুরাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড” চালু করে। ২০২১ সালে উক্ত পদক লাভ করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৪. কুমিল্লা পদ্ধতি
বার্ড অনেকগুলো সফল পল্লী উন্নয়ন মডেলের উদ্ভাবক। এর অনেকগুলোর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে পল্লী উন্নয়নের বিখ্যাত মডেল ‘কুমিল্লা পদ্ধতি’। এগুলোর অন্যতম হল পল্লী পূর্ত কর্মসূচী (Rural Works Programme-RWP) এ মডেল পল্লীর চাহিদা অনুযায়ী ও জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পল্লীর প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের পথিকৃৎ। জমিকে অধিকতর উৎপাদনশীল করার লক্ষ্যে থানা সেচ কর্মসূচী (Thana Irrigation Programme-TIP) বাস্তবায়ন করা হয়। দ্বিস্তর সমবায় বা কুমিল্লা পদ্ধতির সমবায়ের আওতায় গ্রাম পর্যায়ে জনগণকে সংগঠিত করে প্রাথমিক সমিতি এবং থানা (উপজেলা) পর্যায়ে প্রাথমিক সমিতিসমূহের ফেডারেশন হিসাবে থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি (Thana Central Cooperative Association-TCCA) গঠন করা হয়। ইউসিসিএ-র কাজ হল প্রশিক্ষণ প্রদান, পুঁজিগঠন, বিভিন্ন উপকরণ ও ঋণের ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরে সহায়তা প্রদান করা। উপজেলা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র (Upazila Training & Development Centre-UTDC) একাডেমীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী। দেশব্যাপী পল্লী প্রশাসনের ক্ষেত্রে জাতিগঠনমূলক বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং তৃণমূল পর্যায়ে মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে এই কর্মসূচী ব্যবহৃত হচ্ছে। একাডেমী প্রবর্তিত উল্লিখিত সকল কর্মসূচী, পদ্ধতি ও ধারণাকে সমন্বিতভাবে পল্লী উন্নয়নে কুমিল্লা পদ্ধতি বলা হয় । এ পদ্ধতির মাধ্যমে দেশব্যাপী ভৌত ও প্রশাসনিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং সরকারী- বেসরকারী সেবা গ্রহণের জন্য শক্তিশালী সেবা গ্রহণকারী ব্যবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (LGED) বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (BRDB) উপজেলা কমপ্লেক্স, পল্লী বিদ্যুৎতায়ন বোর্ড (REB), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থা (BADC) এবং অন্যান্য কতিপয় সরকারী সংস্থা (পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম, শিশু কার্যক্রম ও ঈমাম প্রশিক্ষণ) একাডেমীর অনেকগুলো সফল মডেল জাতীয়ভাবে বাস্তবায়নের ফসল ।
৫. সাম্প্রতিক উদ্ভাবিত সফল মডেল
৫.১ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি (সিভিডিপি)
সম্প্রতি সরকার সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি বা সিভিডিপি নামক সফল কর্মসূচি গ্রহণ করেছে যা ১৯৭৫ সাল থেকে বার্ড কর্তৃক এদেশে পল্লী উন্নয়নের মডেল হিসেবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল হিসেবে পাওয়া যায়। ১৯৭৫ সালের ২৯শে এপ্রিল টোটাল ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচি কার্যক্রম শুরু হয়। যা ১৯৮৩ সাল থেকে সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচী নামে অবিহিত হয়। বার্ড ভূমিহীন, শ্রমিক, বিত্তহীন ও দুঃস্থ লোকদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তির কথা স্মরণ রাখে এবং সেই সাথে গ্রামে সকল শ্রেণী ও পেশার লোকের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সাংগিঠণিক কাঠামো সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে পল্লী উন্নয়নে কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবনে গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায়। যে কর্মসূচীর মাধ্যমে সুশৃংখল পল্লী উন্নয়ন অবকাঠামো তৈরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে তারই নাম সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচী (সিভিডিপি), যা বর্তমানে পল্লী উন্নয়নের সফল মডেল হিসেবে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতায় ৪টি সংস্থা যথাক্রমে বার্ড, কুমিল্লা, আরডিএ, বগুড়া, আরডিবি এ সমবায় অধিদপ্তর, ঢাকার মাধ্যমে দেশের জেলার ৬৬টি উপজেলার ৪২৭৫টি গ্রামে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ কর্তৃক জাতীয় কর্মসূচী হিসাবে ২০০৫ সাল থেকে বাস্তবায়নাধীন। গ্রামের সকল শ্রেণী ও পেশার জনগোষ্ঠীকে একক সমবায় সংগঠনের আওতায় এনে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন করা কর্মসূচীর প্রধান উদ্দেশ্য। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রাম ভিত্তিক একক সমবায় সংগঠনের আওতায় গ্রামের ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী নির্বিশেষে সকল পেশা ও শ্রেণীর জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে তাদের আর্থ-সামাজিক তথ্য সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য মোচন করা।
৫.২ ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ কর্তৃক ১৯৭৬ সনে কুমিল্লা, বগুড়া ও ময়মনসিংহ জেলার ৩টি সদর থানায় পরীক্ষামূলকভাবে ক্ষুদ্র কৃষক ও ভূমিহীন শ্রমিক উন্নয়ন প্রকল্প কার্যক্রম শুরু করা হয়। বার্ড কর্তৃক পরিচালিত এই প্রকল্পের মাধ্যমেই দেশে সর্বপ্রথম জামানতবিহীন ঋণ দান কার্য্ক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের অগ্রগতি সন্তোষজনক পরিলক্ষিত হওয়ায় জুলাই ১৯৮৮ হতে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার ১১টি থানায় প্রকল্পটির কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়। জুন ১৯৯১ প্রকল্পের ‘প্রথম পর্যায়’-এর বাস্তবায়ন সমাপ্ত হয়। জুলাই ১৯৯১ হতে প্রকল্পের ‘দ্বিতীয় পর্যায়’ বাস্তবায়ন শুরু হয়। প্রকল্পের ‘দ্বিতীয় পর্যায়’ বাস্তবায়নকালে বরিশাল জেলার ৪টি ও ভোলা জেলার ৩টি থানাকে প্রকল্পভুক্ত করা হয়। জুলাই ১৯৯৬ হতে প্রকল্পের ‘তৃতীয় পর্যায়’র বাস্তবায়ন চলে। এ পর্যায়ে চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানা প্রকল্পভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড), কুমিল্লা ১৯৮৫ সনের জুলাই হতে এককভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। জনতা ব্যাংক ১৯৭৬ সন এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১৯৯৫ সন হতে প্রকল্পের সুফলভোগী সদস্য/সদস্যাদের ‘জামানত বিহীন’ ঋণ প্রদান করে আসছে। এভাবে বিগত প্রায় ২৮ বছর সাফল্যের সাথে দেশের ৮টি জেলার ৩০টি উপজেলায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সরকার ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন বা এসএফডিএফ নামে স্বতন্ত্র একটি সংগঠন গড়ে তোলো। আগামী দিনের গরীব, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের সমস্যাগুলোকে সমাধান করাই এর মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া প্রকল্পের নিকটবর্তী উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষুদ্র কৃষক ও ভূমিহীন শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করে তাদের উৎপাদন, কর্মসংস্থান তথা আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে ‘জামানত বিহীন’ ঋণ সহায়তাদানের মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান উন্নয়ন। প্রকল্পের দীর্ঘ মেয়াদী উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রকল্পের আওতায় গঠিত দলগুলোকে দলের সকল সদস্যগণের দলীয় কার্যক্রমে অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করে আর্থিকভাবে সয়ম্ভর এবং ব্যবস্থাপনার দিক থেকে স্ব-কার্যক্রম দলে উন্নীতকরণ।
৫.৩ গ্রামীণ স্যানিটেশন উন্নয়ন প্রকল্প
২০১০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্যানিটেশন এ শ্লোগানকে সামনে রেখে পরিবেশ বান্ধব গ্রাম উন্নয়ন এবং কৃষি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে মানব উচ্ছিষ্ট (Human Excreta) দিয়ে তৈরি জৈব সারের ব্যবহারের দিকে অধিকতর গুরুত্ব বিবেচনায় এনে Japan Association of Drainage and Environment (JADE) এর কারিগরি সহায়তা এবং Japan International Cooperation Agency (JICA) এর আর্থিক সহায়তায় বার্ড ২০০৪ সাল থেকে প্রায়োগিক গবেষণার কাজ হাতে নেয়। প্রায়োগিক গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ইকো-টয়লেট যাদের রয়েছে তারা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে মানব মল ও মূত্র তাদের জমিতে ব্যবহার করছে ফলে রাসায়ানিক সারের ব্যবহার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। প্রকল্পটির সফলতার প্রেক্ষিতে সরকার প্রকল্পটি গ্রহণ করে সারাদেশে ১৫০০টি ইউনিয়নে প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে ১৫০০টি মডেল ইকো-টয়লেট স্থাপন করে।