Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১২ অক্টোবর ২০২৩

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক

 

ড. আখতার হামিদ খান বাংলাদেশের কুমিল্লায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা এবং পল্লী উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সফল নেতৃত্ব দানের জন্য সমগ্র বিশ্বে অত্যন্ত সমাদৃত। বিশেষ করে পল্লী উন্নয়নের কার্যকর মডেল উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।

 

ড. খান ভারতের আগ্রায় ১৯১৪ সালের ১৫ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। ভারতের আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৪ সালে ইংরেজী সাহিত্যে এম. এ ডিগ্রি লাভ করে তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অধীনে অত্যন্ত সম্মানজনক ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আই সি.এস) কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি আইসিএস শিক্ষানবীস কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৩৬-৩৮ সালে ইংল্যান্ডের ম্যাগডিলিন কলেজ, কেমব্রীজ-এ শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় ঔপনিবেসিক প্রশাসনের অমানবিক মনোভাবের কারণে ১৯৪৪ সালে তিনি সিভিল সার্ভিস চাকুরী থেকে পদত্যাগ করেন এবং ভারতের আলীগড়ে একটি গ্রামে শ্রমিক ও তালা মেরামতকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং দু’বছর পর তিনি সে কাজটি ছেড়ে দেন। এরপর ১৯৪৭ সাল থেকে দিল্লীর ‘জামিয়া মিল্লিয়া’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষক হিসেবে তিন বছর কাজ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি পাকিস্তানে চলে যান এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজে যোগদান করেন। তিনি কুমিল্লায় ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। এ সময়ের মধ্যে ১৯৫৪-৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ‘ভি-এইড’ নামের একটি জাতীয় কর্মসূচীর পরিচালক হিসেবে ডেপুটেশনে তাঁকে নিয়োজন দেয়া হয়। ১৯৫৮ সালে তিনি মিশিগান ষ্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য গমন করেন । সেখান থেকে ফিরে পাকিস্তান পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর (বর্তমানে বার্ড) এর প্রথম প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। একাডেমির পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি হিসেবেও তিনি কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন।  ষাটের দশকে ড. খানের নেতৃত্বে উদ্ভাবিত পল্লী উন্নয়নে কুমিল্লা মডেল-এর জন্য বার্ড বিশ্বখ্যাতি অর্জন করে।

 

১৯৭১-৭২ সালে ড. খান পাকিস্তানের লায়েলপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৭২-৭৩ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেন। অতঃপর ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত মিশিগান ষ্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভিজিটিং প্রফেসর’ হিসেবে তিনি কাজ করেন। এই সময়কালে তিনি পেশোয়ারে PARD এর (১৯৭৩-১৯৭৫) উপদেষ্টাএবং উপদেষ্টা, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়া, বাংলাদেশ (1978-79) হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে, করাচিতে ওরাঙ্গি পাইলট প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল (প্রায় ০.৬ মিলিয়ন লোক অধ্যুষিত একটি বিস্তীর্ণ উপনিবেশের স্যানিটেশন, ড্রেনেজ, পয়ঃনিষ্কাশন, শিক্ষা ইত্যাদির উন্নতির লক্ষ্যে) এবং তখন থেকে তিনি ছিলেন এটির পরিচালক এবং এর সবচেয়ে গতিশীল এবং উদ্ভাবনী নেতা।

 

গ্রামীণ নিম্ন আয়ের এলাকার উন্নয়নে তার অগ্রণী কাজের জন্য ডঃ খান সিতারা--পাকিস্তান (১৯৬১), ম্যাগসেসে পুরস্কার, ফিলিপাইন প্রজাতন্ত্র (১৯৬৩) এবং মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির সম্মানসূচক ডক্টর অফ ডিগ্রীতে (১৯৬৪)  ভূষিত হয়েছেন। এমএসইউ ছাড়াও, তিনি সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি, উড্রো উইলসন স্কুল, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেছেন।

 

একজন আজীবন অনুশীলনকারী সমাজবিজ্ঞানী হিসাবে, তার সমস্ত একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক সাধনা বাস্তবিক উন্নয়নমূলক কাজগুলিকে কেন্দ্র করে যার লক্ষ্য ছিল দরিদ্র এবং হতাশাগ্রস্তদের উন্নতি। এই অসহায় মানুষের জন্য গভীর উদ্বেগ- তাদের দারিদ্র্য, অজ্ঞতা এবং পশ্চাদপদতা- তার জীবনকে যন্ত্রণা দিয়েছে এবং তার চিন্তা কর্মের গতিপথকে রূপ দিয়েছে। ড. আখতার হামিদ খান ০৯ অক্টোবর ১৯৯৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইন্তেকাল করেন।