Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৮ নভেম্বর ২০২৩

“কুমিল্লার হাতে বোনা খাদি শিল্পের বাজার সম্প্রসারণ ও সক্ষমতা উন্নয়ন” শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্প

 

উদ্যোগী মন্ত্রণালয়/বিভাগ

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ

বাস্তবায়নকারী সংস্থা

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একডেমি (বার্ড)

বাস্তবায়নকাল

জুলাই ২০২২ - জুন ২০২৫

বাজেট

৯,০০,০০০.০০ ( ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর )

অর্থায়নের ধরণ ও উৎস

জিওবি

প্রকল্প পরিচালক/ পরিচালকবৃন্দের নাম ও পদবি

ড.শেখ মাসুদুর রহমান, পরিচালক

কাজী সোনিয়া রহমান, যুগ্ন পরিচালক

মোহাম্মদ আশরাফুর রহমান ভূঞা, সহকারী পরিচালক

আশিকুর রহমান, সহকারী পরিচালক

 

প্রকল্পের/ প্রায়োগিক গবেষণার পটভূমি: খাদি একটি ঐতহ্যিবাহী শিল্প। দ্রুততার সাথে কাপড় তৈরীর জন্য মাটির নিচে গর্ত করে পায়ে চালানো প্যাডল দ্বারা এ কাপড় তৈরী করা হতো। খাঁদে বা গর্তে বসে যে তাঁতটা তৈরী করা হতো সেটাই হচ্ছে খাদি, খাদ থেকে খাদি শব্দটি এসেছে। আবার অনেকে বলে থাকেন খাদি বা খদ্দর শব্দটি গুজরাট থেকে এসেছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে খাদি কাপড়ের প্রচলন অনেক আগে থেকে প্রচলিত থাকলেও এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মহাত্মা গান্ধীর কথাই বলা হয়ে থাকে। ১৯২০ সালে তিনিই প্রথম স্বদেশী পন্যকে প্রতিষ্ঠার উদাহরণ হিসেবে খাদি কাপড়কে সবার সামনে নিয়ে আসেন এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। ‘স্বরাজ’ প্রতিষ্ঠার জন্য স্বদেশী পন্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং খাদি কাপড় হতে পারে এর অন্যতম উদাহরন - এ চেতনাকেই  তৎকালীন বৃটিশ ভারতে জাগ্রত করেছিলেন মহাত্মাগান্ধী। এ কারনেই স্বদেশী আন্দোলনের সাথে খাদি কাপড়ের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত । ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী কুমিল্লার চান্দিনায় আসেন এবং বিদেশী কাপড় ছেড়ে দেশী কাপড় ব্যবহারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি নিজে চরকার ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণও প্রদান করেন।

 ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর তৎকালীন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খান কুমিল্লা খদ্দরের মানোন্নয়নে অম্বর চরকা ব্যবহারের মাধ্যমে বেশি পরিমানে উন্নত মানের সুতায় খদ্দর উৎপাদনের প্রচেষ্টা নেন। পরবর্তিতে ড. খান এবং  এবং তৎকালীন গভর্নর ফিরোজ খান নূনের সহযোগীতায় ‘দ্য খাদি এন্ড কটেজ ইনডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড’ এর প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৫৭ সালের দিকে ড. খানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভারত থেকে তিনটি অম্বর চরকা ও একজন প্রশিক্ষিত কারিগর আনা হয়। অম্বর চরকা খাদি বস্ত্র উৎপাদনে ভালো ফল দেয়ায় একটি প্রকল্পের আওতায় সে সময় প্রায় ৪০০ অম্বর চরকা ভারত থেকে আমদানি করে খাদি সমিতিকে দেয়া হয়। চান্দিনা অঞ্চলে  এই শিল্পের  হাল ধরেন শৈলেন গুহ ও তাঁর ছেলে বিজন গুহ।  কুমিল্লা অঞ্চলে  শৈলেন গুহ এর ‘খাদিবাবু’ নামে পরিচিত, মুলতঃ তাঁর হাত ধরে এ অঞ্চলে খাদি শিল্পের উত্থান ঘটে এবং যিনি মৃত্যু পুর্ব পর্যন্ত কুমিল্লার চান্দিনার ঐতিহ্যবাহী খাদি বাঁচিয়ে রাখতে ও এর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।  ১৯৯৪ সালে কুমিল্লার খাদি শিল্প তাদের গুনগত মানের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়।

খাদি শুধু কাপড়েরই নাম নয়, নিজেদের অধিকার সচেতনতার এক অন্যতম ম্ইালফলকের নাম।  ইংরেজ শাসনামলে পুরো উপমহাদেশ জুড়ে ইংরেজদের উৎপাদিত পণ্যের আধিক্য ছিল। যখন স্বদেশী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় তখন  বিদেশী পন্যকে ‘না’ বলে নিজেদের দ্বারা উৎপাদিত পন্য ব্যবহারে ঐক্যবদ্ধ হলো এই উপমহাদেশের মানুষ। নিজেদের পোশাকের চাহিদা মেটানোর জন্য চরকায় খাদি কাপড় বোনা ও তার ব্যবহার জোরেসোরে শুরু হলো। কার্পাস তুলা থেকে তৈরী হতো সুতা এবং সেই সুতা ব্যবহার করে চরকায় তৈরী হতো খাদি কাপড়। 

প্রাক ব্রিটিশ ভারতে কুমিল্লা অঞ্চলে যারা দেশীয় পদ্বতিতে কাপড় বুনে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদেরকে স্থানীয় ভাষায় ‘যুগী’ বা ‘দেবনাথ’ বলা হতো। এরই সুত্র ধরে ১৯২১সালে মহাত্মা গান্ধী কুমিল্লার চান্দিনা অঞ্চলে আসেন এবং বিদেশী কাপড় ছেড়ে দেশী কাপড় ব্যবহারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি নিজে চরকার ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণও দেন। গান্ধীজীর প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লার অভয় আশ্রম খাদি শিল্প প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বৃটিশ পরবর্তী সময়ে যন্ত্র শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটলে হস্ত নির্ভর তাঁত শিল্পের ব্যাপকতা দিনে দিনে কমতে থাকে এবং বিরাজমান পরিস্থিতিতে হস্ত নির্ভর খাদি শিল্প অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যায়। একদিকে কম উৎপাদনের হার অন্যদিকে কম বিক্রয় মূল্য তাদের সংকটকে আরো প্রলম্বিত করে তুলেছে। ব্যবহারিকভাবে হস্ত নির্ভর খাদি কাপড়, যন্ত্র নির্ভর কাপড়ের তুলনায় বেশ আরাম দায়ক হলেও খাদি শিল্পীরা বেশি পরিমান মুনাফার আশায় যন্ত্র নির্ভর খাদি কাপড় উৎপাদনের দিকে ঝুকে পড়ছে।  বর্তমানে দেবিদ্বার উপজেলার বড়কামতায় ৭ থেকে ৮টি ঐতিহ্যগত তাঁত পরিবার রয়েছে যারা এখনো পুরাপুরিভাবে হস্ত নির্ভর খাদি কাপড় তৈরী করে থাকেন। খাদি কাপড় তৈরীর অন্যতম নিয়মক হলো সুতা। তারা খাদি কাপড় তৈরীতে পারদর্শী হলেও তারা কখনো চরকার সাহায্যে সুতা তৈরীর কাজে যুক্ত নয়। খাদি কাপড় বুননে প্রথাগতভাবে তারা সুতা কাটা নারী শ্রমিকের উপর নির্ভর করে যারা পাশ্ববর্তী  চান্দিনা, মাদায়া, কলাগাঁও গ্রামে বসবাস করেন এবং তাদের সংখ্যা আনুমানিক ৭০০-৮০০ এর মতো। বিবাহিত, স্বামি পরিত্যাক্তা, বিধবা, বয়ষ্ক নারীরা সাধারণতঃ তুলা দিয়ে সুতা কাটার কাজে নিযুক্ত। পরিশ্রমের তুলনায় শ্রম মূল্য অনেক কম হওয়ায় সুতা কাটা নারী শ্রমিকেরাও তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। সারা দিনে ১ কেজি তুলা দিয়ে এক কেজি সুতা তৈরী করলে ৬০ টাকা পাওয়া যায় যেখানে অন্য কাজে যুক্ত হলে অনেক বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া যায়, অন্যদিকে হাতে বুনতে গেলে একটা প্রোডাক্ট এর মজুরি বাবদ খরচ পড়ে ২০০টাকা আর পাওয়ার লুমে করলে ৪০টাকা খরচ পড়ে, যার ফলে হাতে বোনা খাদি কাপড়ের বিশেষ কদর থাকলেও তাদের জন্য পৃথক ধরণের গ্রাহক ও বাজার ব্যবস্থা না থাকায় হস্ত নির্ভর খাদি শিল্পীদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। অথচ আজো খাদি কাপড় বলতে হাতে বোনা খাদি কাপড়কে বোঝানো হয়, এমনকি অনেক সময় পাওয়ার লুমে বোনা কাপড় বেশি দামে বিক্রি করার জন্য হাতে বোনা খাদি কাপড়ের কথা বলে বিক্রয় করা হয়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের জন্য সতন্ত্র গ্রাহক ও স্বতন্ত্র বাজার অনুসন্ধ্যান জরুরী। চারু ও কারু শিল্পের সহায়তা, সুতা কাটা নারী শ্রমিকদের আর্থিক প্রনোদনা, খাদি শিল্পীদের তুলা সহায়তা, তাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন করে যথাযথ স্থানে বিপননের ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন পারে  এ গৌরবময় শিল্পের পুনরুদ্ধার করতে। তাই বর্তমান বাস্তবতায় প্রকল্পটি  অত্যন্ত জরুরী।       

 

 প্রকল্পের/ প্রায়োগিক গবেষণার মূল উদ্দেশ্য: প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল খাদির পতনের মূল কারণগুলি চিহ্নিত করা এবং বিকাশ করা।

 

প্রকল্পের বিশেষ উদ্দেশ্যগুলো হলো:

 ১. চরকা দিয়ে সুতা কাটা নারী শ্রমিক এবং হস্ত নির্ভর খাদি শিল্পীদের সুসংগঠিত করে গুনগত সুতা ও কাপড় উৎপাদন করা;

২.  চারু-কারু শিল্পের সহায়তায় উৎপাদিত খাদি কাপড়ের মুল্য সংযোজন করা এবং উপযুক্ত স্থানে বিক্রির ব্যবস্থা করা;

৩.  তাদের মধ্য থেকে নব্য খাদি শিল্পী বা উদ্যোক্তা তৈরী করা।

প্রকল্পের/প্রায়োগিক গবেষণার মূল কম্পোনেন্টসমূহ:

  • আঁশতুলা ক্রয়
  • সুতা বোনা
  • নতুন তাঁত স্থাপন
  • কাপড় তৈরি
  • সাংগঠনিক কাঠামো পরিচালনা
  • ফিনিশিং প্রক্রিয়া
  • রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আরএনডি)
  • বিপণন ব্যবস্থাপনা

প্রকল্প এলাকাঃ কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার ও চান্দিনা উপজেলা

গ্রামীণ উন্নয়নে প্রকল্পের/প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রমের প্রভাব ও গুরুত্ব:

  • স্থানীয়ভাবে যেসব খাদিশিল্পীরা এই শিল্পের বিলুপ্তির অপেক্ষায় এবং ইতিমধ্যে দারিদ্র্যের কারণে অনেকেই অন্য পেশার সাথে জড়িত হয়ে পড়েছেন, তাদেরকে নতুনভাবে ফিরিয়ে আনতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
  • এর ফলে এই এলাকার দারিদ্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃজন, বিশেষ করে হতদরিদ্র নারীশ্রমিক, যারা গৃহে থাকতে পছন্দ করেন, তাদের রোজগারের একটি নতুন পথ উন্মোচন করবে।
  • এইসব দরিদ্র বা হতদরিদ্র পরিবারের আয় বৃদ্ধি পেলে তারা নিজেদের পরিবারের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
  • শিল্পটি সামগ্রিকভাবে হস্তনির্ভর বলে এটি স্থানীয় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখবে।
  • বস্ত্র শিল্পকারখানার মতো প্রতিনিয়ত বায়ু ও পানিদূষণের সম্ভাবনা চলমান প্রকল্পটিতে নেই। তাই জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকাবেলায়ও