প্রায়োগিক গবেষণার শিরোনাম: গ্রামীণ বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে কম্যুনিটির অংশগ্রহণে সহায়তা প্রদান জোরদারকরণ
উদ্যোগী মন্ত্রণালয়/বিভাগ |
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ |
বাস্তবায়নকারী সংস্থা |
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একডেমি (বার্ড) |
বাস্তবায়নকাল |
জুলাই ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ – জুন ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ |
বাজেট |
১৪,০০,০০০ (চৌদ্দ লক্ষ মাত্র) টাকা |
অর্থায়নের ধরণ ও উৎস |
রাজস্ব |
প্রায়োগিক গবেষক/ গবেষকবৃন্দের নাম ও পদবি |
জনাব নাছিমা আক্তার, পরিচালক (পল্লী সমাজতত্ত্ব ও জনমিতি) , বার্ড ও প্রায়োগিক গবেষণার পরামর্শক জনাব কাজী সোনিয়া রহমান, যুগ্ম-পরিচালক (পল্লী সমাজতত্ত্ব), বার্ড ও প্রধান প্রায়োগিক গবেষক জনাব সাইফুন নাহার, উপপরিচালক (পল্লী সমাজতত্ত্ব), বার্ড ও কমপোনেন্ট লিডার জনাব ফরিদা ইয়াসমিন, উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ), বার্ড ও সহযোগী প্রায়োগিক গবেষক জনাব মো. শাহ্জালাল, সহকারী পরিচালক (জনমিতি), বার্ড ও সহকারী প্রায়োগিক গবেষক |
প্রকল্পের/ প্রায়োগিক গবেষণার পটভূমি:
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। প্রবীণ বলতে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে, যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২–এর প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার ৭১৯। তারা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারিতে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সর্বশেষ দুইটি জনশুমারির মধ্যে গত ১১ বছরে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ, যা দেশের ধারাবাহিক জনশুমারির ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি। জাতিসংঘের জনসংখ্যা উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনএফপিএ) প্রাক্কলন মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের সংখ্যা হবে ৩ দশমিক ৬ কোটি এবং মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। এটি বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স হবে ৬০ বছর বা তার বেশি। দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। জনশুমারি আরো বলছে, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। অন্যদিকে প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ-২০২১ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। এই প্রতিবন্ধীর মধ্যে পুরুষ ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং নারী ২ দশমিক ৩২ শতাংশ। এক্ষেত্রে ১১ ধরনের প্রতিবন্ধিতার শিকার তারা। এছাড়া, দেশের মোট প্রতিবন্ধীর মধ্যে শহরে জনসংখ্যার ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং পল্লি এলাকায় ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এছাড়া অটিজম আছে শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ। প্রতিবন্ধিতা তৈরি করে এমন মানসিক অসুস্থতা আছে শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ। আরও আছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ, বাকপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ এবং শ্রবণপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। এছাড়া সেরিব্রাল পালসি শূন্য দশমিক ০৮ শতাংশ, ডাউন সিন্ড্রোম শূন্য দশমিক ০৪ শতাংশ, শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা শূন্য দশমিক ০২ শতাংশ, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ।
প্রবীণরা হলেন ইতিহাসের সূত্র। জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভান্ডার। চলমান সমাজের সংযোগ সেতু। বাংলাদেশের বেশিরভাগ প্রবীণ গ্রামগঞ্জে বসবাস করেন। নিজের সবটুকু উজাড় করে সন্তানকে মানুষ করেছেন আর এখন সন্তানের এমন নৈতিক ও মানবিক অবক্ষয় দেখে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। সন্তানরা মা-বাবার ভরণ-পোষণের সব দায়িত্ব নিতে ধর্মীয়, মানবিক ও নৈতিকভাবে বাধ্য। কিন্তু গ্রামীণ প্রবীণরা অনেক সময় সন্তানদের কাছ থেকে যথোপযুক্ত সাড়া পান না। সমাজের চোখেও তারা অবহেলার পাত্র। বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ প্রতিবন্ধী মানুষ। শুধু সমাজ বা রাষ্ট্র থেকেই নয়, পরিবার থেকেও প্রায়শই বঞ্চনা আর নেতিবাচক আচরণের শিকার হন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বহু দেশেই প্রতিবন্ধীদের রয়েছে নানা বঞ্চনা আর বৈষম্যের অভিজ্ঞতা। বঞ্চনা আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে নিজের অধিকার আদায়ে প্রতিবন্ধীরা নানাভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় সবসময়ই পিছিয়ে থাকে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ থাকলেও নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা সঠিকভাবে সুযোগ পায় না।
প্রকল্পের/ প্রায়োগিক গবেষণার মূল উদ্দেশ্য:
গ্রামীণ বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিতে কম্যুনিটির অংশগ্রহণে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা প্রদান করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা। এছাড়া টেকসই শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্ম-সক্রিয়তা অর্জন পূর্বক দারিদ্র্য হ্রাস করা, প্রত্যাশিত মূল্যবোধ সুপ্রতিষ্ঠায় আইনগত সুরক্ষা, কল্যাণমূলক নীতিমালা এবং স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টি উন্নয়নসহ মৌলিক অধিকারসমূহ সমন্বিতভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের সার্বিক জীবনধারার মানোন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার করা।
প্রকল্পের বিশেষ উদ্দেশ্যগুলো হলো:
(ক) টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ও সরকারের লক্ষ্য অর্জনে গ্রামীণ বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিতে সংগঠন তৈরী, আত্ম-সক্রিয়তা, দলীয় সক্ষমতা ও নেতৃত্বের উন্নয়ন সাধনে সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা বৃদ্ধি;
(খ) উপকারভোগী জনগোষ্ঠীর সৃজনশীলতা ও কর্মোদ্দীপনা সৃষ্টিসহ সক্ষমতা উন্নয়নপূর্বক দারিদ্র্য হ্রাস, সঞ্চয়ের মাধ্যমে পুঁজি গঠন, প্রণোদনা ও ঋণ সহায়তা এবং আত্মনির্ভশীলতা অর্জনে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা;
(গ) ব্যক্তি, পরিবার এবং কম্যুনিটি পর্যায়ে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের প্রতি বৈষম্য ও অবহেলা প্রতিরোধ, টেকসই শিক্ষা, প্রত্যাশিত মূল্যবোধ ও অধিকার সুপ্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্য-পুষ্টি উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা ;
(ঘ) সকল সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে পরিষেবা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা এবং সহায়ক প্রযুক্তি ও উপকরণ সামগ্রী ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য তথ্যায়ন এবং সংযোগ স্থাপনে সহায়তা প্রদান ও কার্যকর নেটওয়ার্ক স্থাপন করা।
প্রকল্পের/প্রায়োগিক গবেষণার মূল কম্পোনেন্টসমূহ:
প্রকল্প এলাকা
প্রায়োগিক গবেষণার কার্যক্রমের আওতায় গবেষণাভুক্ত কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ১২টি গ্রামে প্রাপ্যতার ভিত্তিতে সম্ভাব্য ৪০০ পরিবার নিয়ে কম্পোনেন্ট ভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে যা ২০২২ – ২৩ অর্থবছরের গৃহীত কার্যক্রমের মাধ্যমে চলমান রয়েছে।
গ্রামীণ উন্নয়নে প্রকল্পের/প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রমের প্রভাব ও গুরুত্ব:
“গ্রামীণ বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে কম্যুনিটির অংশগ্রহণে সহায়তা প্রদান জোরদারকরণ” শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণাটির সুফলভোগী হচ্ছে গ্রামের হতদরিদ্র বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অক্ষম প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী। এই উভয় শ্রেণির জনগোষ্ঠীই সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘নিঃসঙ্গ’ জীবন যাপন করে। অথচ বয়স্ক বাবা-মা একসময় সন্তানদের মানুষ করতে গিয়ে নিজেদের সাধ-আহ্লাদ বিসর্জন দিতে কুণ্ঠিত হননি। আর ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষগুলোর নিজেদের শারীরিক অক্ষমতার পেছনে নিজেদের কোনো দায় নেই। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী—উভয় গোষ্ঠীই সমাজের মানুষের কাছ থেকে বিশেষ সহযোগিতা প্রাপ্তির দাবি রাখে। আলোচ্য প্রায়োগিক গবেষণার কতিপয় উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হচ্ছে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরি করা। এক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষে যে যে ধরনের কাজ করতে সক্ষম হবে তাকে সেই কাজের সুযোগ করে দেয়ার প্রয়াস গ্রহণ করা হবে। এতে একদিকে যেমন সমাজের এই অবহেলিত জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য লাঘব হবে, অপরদিকে তারা নিজেরাও সাবলম্বী হয়ে উঠবেন।
নিম্নে আলোচ্য প্রায়োগিক গবেষণাটির প্রভাবসমূহ সংক্ষেপে আলোচিত হলোঃ
ক. বিশেষ গ্রাম সভা/উঠান বৈঠক
বিশেষ গ্রাম সভা / উঠান বৈঠকের উদ্দেশ্য হলো প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনুষদ সদস্যবৃন্দের উপস্থিতিতে গ্রামীণ বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে আর্থ-সামাজিক সহায়তা প্রদান করা যেনো তারা আত্মবিশ্বাস অর্জনের সুযোগ লাভ করে। এছাড়া এই জনগোষ্ঠীর মানসিক অবস্থা নিরূপণ (কাউন্সেলিং) করে তাদের কোনো আয়বর্ধন মূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করা যায় কী না তা পর্যবেক্ষণ করা। গবেষক দল মাঠে কাজ করতে গিয়ে উপলব্ধি করেছে যেহেতু উপকারভোগীরা বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী, সেহেতু তাদেরকে একত্রে জড়ো করা এবং মোটিভেশন দেয়া বড় রকমের চ্যালেঞ্জিং কাজ তাই গবেষক দল প্রতি মাসে দুটি/ততোধিক সভায় উপকারভোগীদের সাথে মিলিত হয়ে তাদেরকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা ও সামাজিক মূল্যবোধ বিকাশ করার ক্ষেত্রে উদ্বুধ করা হয়। এ সময় উক্ত গ্রামের বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সাথে আলাপচারিতার মাধ্যমে তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্র সমূহ নিরূপণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়।
খ. গ্রাম সংগঠন তৈরি
প্রকল্পের সুফলভোগীদের অন্তর্ভুক্তিতে ৪টি গ্রাম সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। সেখানে গ্রাম সংগঠন সৃজন করে সভাপতি ও ম্যানেজার নির্বাচন করা হয়। সংগঠনের মাধ্যমে গ্রামীণ বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী নিজেদের সার্বিক জীবনধারার মান উন্নয়নে সচেতনতা বৃদ্ধির সুযোগ পাবে এবং এতে সংগঠিত মূল্যবোধ ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে।
গ. ক্যাম্পেইন কর্মশালা
জাতীয় জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে কুমিল্লা আদর্শ সদরের উজিরপুর গ্রামে ক্যাম্পেইন কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় অর্ধ শতাধিক সুফল ভোগী অংশ নেয়। এসময় প্রবীণ ও ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা প্রদান সংহতকরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ সৃষ্টির প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় এবং তাদের মাঝে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
ঘ. সুস্থ্য চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা (কমন প্লাটফর্ম নির্ধারণ)
সপ্তাহের যে কোনো একদিন প্রকল্পভূক্ত বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী একটি নির্ধারিত স্থানে একত্র হয়ে নিজেরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক সহায়তা প্রদান করে নিজেদের মধ্যে পারস্পারিক আলাপচারিতার মাধ্যমে নিজেদের একঘেয়েমি দূর করার জন্য প্রকল্প কর্তৃক একটি স্থান/সমিতি অফিস কক্ষ নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। সপ্তাহের যে কোনো একদিন (রবিবার) তারা একটি নির্ধারিত স্থানে একত্র হয়ে নিজেরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক সহায়তা প্রদান করতে পারে।
ঙ. বিনামূল্যে স্বাস্থ্যগত সেবা প্রদান ও স্বাস্থ্য চেক আপ
প্রায়োগিক গবেষণার কম্পোনেন্ট এর অংশ হিসেবে নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রকল্পভূক্ত গ্রামে প্রকল্পের সুফল ভোগীদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা প্রদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেন ময়নামতি মেডিক্যাল কলেজের একজন বিশষজ্ঞ ডাক্তার। তিনি তাদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করেন। এছাড়াও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরণের কর্মসূচির আয়োজন সমৃদ্ধ করতে তাঁর সুচিন্তিত পরামর্শ প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে ফলোআপ চেক আপেরও আয়োজন করা হয়। এতে দেখা গেছে উপকারভোগীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন।
চ. প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ
প্রকল্পের সুফলভোগীদের মধ্যে নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের পরবর্তী সময়ে উপকারভোগীগণ ডাক্তার প্রদত্ত ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী কিছু উপকরণ এবং ঔষধ প্রত্যাশা করেন। এ প্রেক্ষিতে প্রকল্প কতৃপক্ষ কর্তৃক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে বিষয়টি আলোচনা করা হয় এবং জনপ্রতিনিগণ এ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে সহায়তার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এছাড়া স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকের সাথেও আলোচনা চলছে যাতে কমিউনিটি ক্লিনিক হতে বিনামূলে প্রদত্ত ঔষধের সুবিধাটুকু এই বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী পেতে পারে। এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সামান্য কিছু উপকরণ এবং ঔষধপত্র ইতোমধ্যে উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
ছ. স্বাস্থ্য সেবার জন্য Health Card তৈরি
স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির জন্য Health Card তৈরি এবং বিভিন্ন হাসপাতালের সাথে লিংকেজ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরবর্তী পর্যায়ে তাদের মাঝে Health Card বিতরণ করা হয়। উক্ত Health Card প্রদর্শন করে কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে (এনএইচএন ডায়বেটিক হাসপাতাল, ময়নামতি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হলিকেয়ার হাসপাতাল কুমিল্লা) স্বাস্থ্য সেবায় ২৫% ছাড় পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য এই কার্ডের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে।
জ. কেয়ার গিভার তৈরী বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান
গ্রামীণ বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে তাদের পরিবারের সদস্যদের কেয়ার গিভার হিসেবে তৈরী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে তাদের পরিবারের সদস্যদের “ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সো ও কেয়ার গিভার তৈরী “ বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করা হয়। এতে কুমিল্লা নাসিং ইন্সটিটিউট এর প্রিনিাসপালসহ কুমিল্লা হতে আগত চিকিৎসকবৃন্দ সেশন পরিচালনা করেন। উক্ত প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের হাতে কলমে বয়স্কদের পারিবারিক পর্যায়ে সেবা প্রদান করার বিভিন্ন কৌশল, প্রতিবন্ধীদের যত্ন ও শিক্ষা দেয়ার বিভিন্ন কৌশল, ডায়াবেটিস, প্রেসার, জ্বর মাপার বিভিন্ন পর্যায়গুলো হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হয়। এছাড়া নাসিং ইন্সটিটিউট এর সাথে লিংকেজ স্থাপনের মাধ্যমে এদের মধ্য হতে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রফেশনাল কেয়ার গিভার তৈরীর বিষয়ে উদ্যোগ গহণ করা হয়।
ঝ. সেমিনার আয়োজন
গ্রামীণ বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন কার্যক্রমে বার্ডের ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতাঃ প্যানেল আলোচনা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৯ জুন ২০২৩ তারিখ গ্রামীণ বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন কার্যক্রমে বার্ডের ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতাঃ প্যানেল আলোচনা বিষয়ক সেমিনার আয়োজিত হয়। এতে বার্ডের কর্মকর্তা, প্রিন্ট ও মিডিয়াকর্মী, প্যানেল আলোচকগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথি সহ প্রায় ৫০ জন অংশগ্রহণ করেন।