উদ্যোগী মন্ত্রণালয়/বিভাগ |
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ |
বাস্তবায়নকারী সংস্থা |
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একডেমি (বার্ড), কোটবাড়ী, কুমিল্লা |
বাস্তবায়নকাল |
জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৬ পর্যন্ত (৩ বছর) |
বাজেট |
৪.০০ লক্ষ টাকা |
অর্থায়নের ধরণ ও উৎস |
রাজস্ব বাজেট, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একডেমি (বার্ড), কোটবাড়ী, কুমিল্লা |
প্রকল্প পরিচালক/ পরিচালকবৃন্দের নাম ও পদবি |
জনাব ফারুক হোসেন, সহকারী পরিচালক, বার্ড |
প্রকল্পের/ প্রায়োগিক গবেষণার পটভূমি:
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদান অনস্বীকার্য। মোট জিডিপি’র শতকরা ৩.৫৭ ভাগ আসে মৎস্য খাত থেকে, যা দেশের কৃষিজ জিডিপি’র 26.50 শতাংশ। আমাদের নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় মাথাপিছু দৈনিক মাছ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২.৫৮ গ্রাম। মৎস্য খাতের সঙ্গে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১২ শতাংশের অধিক (১৪ লক্ষ নারীসহ মোট ১ কোটি ৯৩ লক্ষ) মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই সেক্টরে নিয়োজিত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৪৭ লক্ষ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে। গত চার দশকে দেশে মাছ চাষে নীরব বিপ্লব সাধিত হলেও গুণগত মানসম্পন্ন পোনার দুষ্প্রাপ্যতা এবং মাছের খাদ্য উপাদানের দুর্মূল্যের কারণে মৎস্য চাষীরা লাভবান হতে পারছে না।
এক্ষেত্রে মৎস্য চাষি/নার্সারি অপারেটরগণ উন্নততর পদ্ধতিতে আশানুরূপ ফল লাভের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যথাসময়ে সঠিক আকার ও কাঙ্ক্ষিত প্রজাতির সুস্থ, সবল উন্নত মানের পোনার দুষ্প্রাপ্যতা মাছ চাষে ভালো ফল লাভের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রেক্ষিতে মানসম্পন্ন পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয়ভাবে নার্সারি স্থাপন অপরিহার্য।
বার্ড ক্যাম্পাসে ২০১৮ সালে মাছের পোনা লালন পালনের সুবিধা সম্বলিত তিনটি নার্সারি পুকুর নিয়ে প্রদর্শনী মৎস্য খামার স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালে মৎস্য খামারে বায়োফ্লক ইউনিট চালু করা হয় এবং ২০২১ সালে একটি স্বল্পমূল্যের একুয়াপনিক্স ইউনিট চালু করা হয়। বায়োফ্লক ইউনিটে পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয় এবং কৃষক পর্যায়ে এ প্রযুক্তিটির সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে নানবিধ চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া একুয়াপনিক্স ইউনিটে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষের অভিযোজ্যতা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে কার্পের সাথে গুলশা ও টেংরা মাছের মিশ্রচাষের অভিযোজ্যতা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া কার্প জাতীয় মাছের রেণুর ক্ষেত্রে পেরিফাইটন পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাদ্য নির্ভর চাষাবাদের অভিযোজ্যতা পরীক্ষা করা হয়। এ ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলো কৃষক পর্যায়ে প্রযুক্তি সম্প্রসারণের পূর্বে অভিজ্ঞতা সঞ্চারী কর্মকাণ্ড হিসেবে নতুন নতুন গবেষণা ধারণার সৃষ্টি করে এবং প্রযুক্তিসমূহের সম্প্রসারণ কৌশল উদ্ভাবনে সহায়তা করে। তাই মৎস্য সেক্টরের বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে এ ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা অব্যাহত রাখতে প্রায়োগিক গবেষণার কর্মকাণ্ডসমূহ চলমান রাখা জরুরী।
প্রকল্পের/ প্রায়োগিক গবেষণার মূল উদ্দেশ্য: আধুনিক মৎস্যচাষ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও গুণগত মানের পোনা উৎপাদনের জন্য আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন একটি প্রদর্শনী মৎস্য খামার গড়ে তোলা এই প্রায়োগিক গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য।
প্রকল্পের বিশেষ উদ্দেশ্যগুলো হলো:
ক) বার্ড ক্যাম্পাসে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন মৎস্যচাষ ব্যবস্থাপনার খামার পর্যায়ের প্রদর্শনী স্থাপন করা;
খ) উন্নত নার্সারী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন মাছের পোনা উৎপাদন করা; এবং
গ) আধুনিক মৎস্যচাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের ব্যবহারিক পাঠদান করা।
প্রকল্পের/প্রায়োগিক গবেষণার মূল কম্পোনেন্টসমূহ: বার্ড ক্যাম্পাসে “প্রদর্শনী মৎস্য খামার” শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণার মূল কম্পোনেন্টসমূহ নিম্নরূপঃ
ক) গুণগত মানসম্পন্ন মাছের পোনা উৎপাদন করা
খ) বায়োফ্লক ইউনিট
গ) একুয়াপনিক্স ইউনিট
ঘ) মাছ চাষের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অভিযোজিত ট্রায়াল
ঙ) প্রশিক্ষণার্থীদের ব্যবহারিক পাঠদান
প্রকল্প এলাকা: বার্ড ক্যাম্পাসের দক্ষিণ-পূর্ব পার্শ্বস্থ প্রদর্শনী মৎস্য খামার এলাকা।
গ্রামীণ উন্নয়নে প্রকল্পের/প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রমের প্রভাব ও গুরুত্ব:
ক্র. নং |
কার্যক্রম (Inputs) |
আউটপুট (Output) |
ফলাফল (Outcome) |
প্রভাব (Impact) |
|
গুণগত মানসম্পন্ন মাছের পোনা উৎপাদন |
মৎস্যচাষীরা গুণগত মানসম্পন্ন অধিক উৎপাদনশীল মাছের পোনার সংস্থান পাচ্ছেন |
কৃষকেরা পোনা উৎপাদন ও ভালো মানের পোনা ব্যবহার করে মাছ চাষের ফলে অধিক লাভবান হচ্ছেন। |
নার্সারী পুকুরে পোনা উৎপাদন ও আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের মাধ্যমে উদ্যোক্তাগণ আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। |
|
বায়োফ্লক ইউনিট পরিচালনা ও প্রশিক্ষণ প্রদান |
বায়োফ্লক ইউনিটের মাধ্যমে আবদ্ধ পরিবেশে ট্যাংকে মাছ চাষের প্রযুক্তি সম্প্রসারণ |
কৃষকেরা পতিত স্থানে বা গৃহ অভ্যন্তরে মাছ চাষ করে অর্থ উপার্জন করতে পারছেন। |
পরিবর্তিত জলবায়ু ও বিরূপ প্রতিবেশে এই প্রযুক্তি মৎস্য উৎপাদনের বিকল্প প্রযুক্তি হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। |
|
একুয়াপনিক্স ইউনিট পরিচালনা ও প্রশিক্ষণ প্রদান |
একুয়াপনিক্স ইউনিটের মাধ্যমে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষাবাদের প্রযুক্তি সম্প্রসারণ |
মৎস্যচাষীরা খাঁচায় বা ট্যাংকে মাছ চাষের পাশাপাশি একুয়াপনিক্স পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে পারছেন। |
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় দেশের জলাবদ্ধ স্থানে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। |
|
মাছ চাষের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অভিযোজিত ট্রায়াল |
কৃষকেরা সহজলভ্য প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে মাছের খাদ্য প্রস্তুত ও মাছ উৎপাদন করছে। |
মাছ চাষের ঝুঁকিসমূহ হ্রাস করে চাষীরা নিরাপদ মাছ উৎপাদন করছেন। |
মৎস্যচাষীদের আয় বৃদ্ধি হয়েছে এবং নিরাপদ আমিষের সংস্থান ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। |
|
প্রশিক্ষণার্থীদের ব্যবহারিক পাঠদান |
আগ্রহী তরুণ ও মৎস্যচাষীদের মৎস্য খামারে উন্নত মৎস্যচাষ প্রযুক্তির উপর ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। |
প্রশিক্ষণার্থীদের আধুনিক মৎস্যচাষ সম্পর্কিত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। |
প্রশিক্ষণার্থীরা তাঁদের অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা ব্যবহার করে মাছ চাষের মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জন করছেন। |