উদ্যোগী মন্ত্রণালয়/বিভাগ |
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ |
বাস্তবায়নকারী সংস্থা |
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) |
বাস্তবায়নকাল |
২০২৩-২০২৪ থেকে ২০২৫-২০২৬ (তিন বছর) |
বাজেট (২০২৩-২০২৪) |
১০,০০,০০০.০০ (দশ লক্ষ) টাকা |
অর্থায়নের ধরণ ও উৎস |
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) এর রাজস্ব বাজেটে পরিচালিত |
প্রকল্প পরিচালক/ পরিচালকবৃন্দের নাম ও পদবি |
জনাব মোঃ রিয়াজ মাহমুদ, প্রধান গবেষক ও উপ-পরিচালক (পল্লী ব্যবসা ব্যবস্থাপনা), বার্ড জনাব মোঃ রয়েল খান, সহকারী গবেষক ও সহকারী পরিচালক (পল্লী শিক্ষা), বার্ড |
প্রকল্পের/ প্রায়োগিক গবেষণার পটভূমি:
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসাবে স্বীকৃত। এই দেশের অনন্য ভৌগলিক অবস্থান, প্লাবনভূমির আধিপত্য এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিম্ন উচ্চতা, উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব, দরিদ্র, প্রাকৃতিক সম্পদ ও এর সেবাসমূহের উপর একচ্ছত্র নির্ভরতার কারণেই এমনটা হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ইতোমধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দেশের উন্নয়ন ধারা ব্যাহত হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশের জনগণ জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। ক্রমাগত বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন ও তাপমাত্রা পরিবর্তনের প্রভাবে হিমালয়ের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে এবং কৃষকরা এই ক্ষতি মোকাবেলায় ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজী বিকল্প চিন্তা করছে। বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর দেশ। দেশের প্রায় ৬২ শতাংশ লোক কোন না কোনভাবে কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেশের কৃষি খাতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের চরাঞ্চলগুলোতে মানুষ কৃষি কাজ ও মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। চরাঞ্চলের কৃষিকাজ পানির উপর নির্ভরশীল। বছরের বৃহৎ একটা সময় চরের নিম্নভূমি পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া চরের মাটিও অন্যান্য মাটির চেয়ে ভিন্ন। চরের কৃষি ব্যবস্থাপনা গতানুগতিক। পাশাপাশি চরাঞ্চলে কৃষির আধুনিক সুযোগগুলোর অপ্রতুলতা রয়েছে। তার উপর কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রেও চরাঞ্চলগুলো সুবিধা বঞ্চিত। অধিকন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে চরগুলোতে বর্ষা মৌসুমে বন্যা, নদীভাঙ্গন, বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড়, শুকনো মৌসুমে খরা, আর্দ্র্যতার অভাব ইত্যাদি সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফলে কৃষকরা প্রতিবছর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ প্রভাব অব্যাহত থাকলে চরাঞ্চলে দিন দিন সমস্যা বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের জীবন ও জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। এই ক্ষতি এড়াতে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজী কৃষি কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করা প্রয়োজন এবং কৃষির উপর একচ্ছত্র নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিভিন্ন অকৃষি কার্যক্রমের মাধ্যমে জীবিকার মানোন্নয়ন ঘটানো যেতে পারে।
প্রকল্পরে/ প্রায়োগকি গবষেণার মূল উদ্দশ্যে: চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকার মান্নোনয়নে অভিযোজন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ এবং বিভিন্ন অকৃষি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করাই হল এই প্রকল্পের সাধারণ উদ্দেশ্য।
প্রকল্পরে বশিষে উদ্দশ্যেগুলো হলো:
ক) জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করার বিষয়ে চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা;
খ) পরিবর্তিত জলবায়ু উপযোগী কৃষি অভিযোজন কার্যক্রমের সূচনা;
গ) দারিদ্র্য বিমোচনে তরুণ এবং বিপন্ন নারীদের মধ্যে উদ্যোক্তা তৈরি করা; এবং
ঘ) দক্ষতা উন্নয়ন ও আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় কৃষি ও অকৃষি উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন সাধনে সহায়তা করা।
প্রকল্পরে/প্রায়োগকি গবষেণার মূল কম্পোনন্টেসমূহ:
ক) গ্রাম সংগঠন ও গ্রাম স্কুল পরিচালনা;
খ) জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু ও স্থানীয় আমন ধানের অভিযোজন চর্চা;
গ) অভিযোজন কার্যক্রম ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য শাক-সবজি ও শস্য চাষ;
ঘ) বজ্র নিরোধক, ফলদ ও ভেষজ বৃক্ষরোপন;
ঙ) ভাসমান বেডে অভিযোাজিত কৃষি চাষাবাদ;
চ) সর্জন পদ্ধতিতে সমন্বিত কৃষি কর্মকান্ডের অভিযোজন চর্চা;
ছ) নদীতে দলগতভাবে ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে খাঁচায় অভিযোজিত মাছ চাষ;
জ) পরিবেশ সংরক্ষণে প্লাস্টিক র্বজ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম;
ঝ) আয়বর্ধনমূলক কার্যক্রমে হস্ত শিল্পের কাজ; ও
ঞ) জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন, পরিবেশ সংরক্ষণ, দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ র্কোস ও মাঠ দিবস আয়োজন করা।
প্রকল্প এলাকা
১. পুরাতন চরচাষী গ্রাম, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ
২. নতুন হাসনাবাদ গ্রাম, দাউদকান্দি, কুমিল্লা
৩. চর কাঁঠালিয়া গ্রাম, মেঘনা, কুমিল্লা।
গ্রামীণ উন্নয়নে প্রকল্পের/প্রায়োগিক গবষেণা কার্যক্রমের প্রভাব ও গুরুত্ব:
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের অভিঘাতে চরাঞ্চলের মানুষের পেশা ও জীবিকায় বিশেষ পরিবর্তন এসেছে। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রকল্পভুক্ত গ্রামসমূহে বছরব্যাপী কৃষিকাজ, বাজার লিংকেজের সুযোগ না থাকায় অকৃষি কার্যক্রমে চরবাসীগণ সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই এই প্রায়োগিক গবেষণায় অভিযোজন চর্চা কার্যক্রমসমূহের বাস্তবায়নের মাধ্যমে বছরব্যাপী কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, উদ্যোক্তা তৈরি ও আয়বর্ধনমূলক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন রকমের অকৃষি কর্মকান্ডের সন্নিবেশ ঘটানো হচ্ছে। বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে ফল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ছাড়াও দুর্যোগ প্রতিরোধে সহায়ক হবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য আনায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। অধিকন্তু, কিছু অভিযোজন চর্চার মাধ্যমে চরবাসীর মধ্যে দলগতভাবে ও অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে কর্মসম্পাদনের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে এবং এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে যা কমিউনিটি পর্যায়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে চরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ও ইতিবাচক অবদান রাখবে। এই প্রায়োগিক গবেষণার কার্যক্রমসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকার মান্নোনয়ন তথা প্রাকৃতিক দুর্যোগে অভিযোজন কার্যক্রম সম্পাদন ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি সম্ভব হবে।