কুমিল্লা পদ্ধতি
বার্ড প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নে “কুমিল্লা মডেল” এর মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের দারিদ্র আর অনগ্রসর প্রতিকূল পরিবেশের অন্ধকার অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার আলোকবর্তিকা তুলে ধরেছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. আখতার হামিদ খান। কুমিল্লা মডেল প্রকৃতপক্ষে এতদঞ্চলে পল্লী উন্নয়নের একটি দার্শনিক ভিত্তি এবং কাঠামো যা বিশ্বের সকল অনগ্রসর দেশের পল্লী উন্নয়নের জন্য অনুকরণীয়। কুমিল্লা মডেলের প্রধান ৪টি কর্মসূচি নিম্নে সংক্ষেপে বর্ননা করা হ’ল;
পল্লী পূর্ত কর্মসূচি (Rural Works Programme-RWP)ঃ যাটের দশকে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নতির জন্য গৃহীত অন্যতম একটি মৌলিক কর্মসূচি ছিল এটি। এ কর্মসূচি পল্লীর চাহিদা অনুযায়ী ও জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পল্লীর প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের পথিকৃৎ। পরবর্তীতে এই কর্মসূচিটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তে রুপান্তরিত হয়। বর্তমানে এলজিইডি বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় রাস্তা ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষনের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে।
থানা সেচ কর্মসূচি (Thana Irrigation Programme-TIP)ঃ এই কর্মসূচি দ্বারা কৃষির আধুনিকায়নের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) নামক সরকারী প্রতিষ্ঠানটি এই দায়িত্ব পালন করছে।
থানা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র (Thana Training & Development Centre-TTDC)ঃ তৃনমূল থেকে পরিকল্পনা গ্রহণ ও থানা পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য থানা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে এই থানা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র পল্লী প্রশাসন সংস্কারের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক ধারা বিলুপ্তি ও পল্লী কর্মসূচি চালু করে উন্নয়নশীল বিশ্বে নন্দিত হয়েছিল। বর্তমানে এই থানা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র বা টিটিডিসি থানা পর্যায়ে সরকারী বিভাগসমূহের সচিবালয় হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে যা উপজেলা পদ্ধতি হিসাবে পরিচিত।
দ্বি-স্তর বিশিষ্ট সমবায়ঃ দ্বি-স্তর বিশিষ্ট সমবায় ব্যবস্থা সমবায় আন্দোলনের উন্নত ও আধুনিক রূপ । হয়। দ্বিস্তর সমবায় বা কুমিল্লা পদ্ধতির সমবায়ের আওতায় গ্রাম পর্যায়ে জনগণকে সংগঠিত করে প্রাথমিক সমিতি এবং থানা (উপজেলা) পর্যায়ে প্রাথমিক সমিতিসমূহের ফেডারেশন হিসাবে থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি (Thana Central Cooperative Association-TCCA) গঠন করা হয়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সমবায়ীদের প্রাথমিক ও কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের অধীনে সমন্বয় ও সহযোগীতার মাধ্যমে সরকারী সেবাসমূহ ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। যাটের দশকে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট সমবায় সত্তরের দশকে Integrated Rural Development Program (IRDP) এবং পরবর্তীতে আশির দশকে Bangladesh Rural Development Board (BRDB) তে উন্নীত হয়েছে।
কুমিল্লা মডেলের সফলতা তৎকালীন কুমিল্লা অঞ্চলের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখেছিল। এ পদ্ধতির মাধ্যমে দেশব্যাপী ভৌত ও প্রশাসনিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং সরকারী- বেসরকারী সেবা গ্রহণের জন্য শক্তিশালী সেবা গ্রহণকারী ব্যবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে।